হত্যা পরিকল্পনা মিন্নির- প্রমাণ করতে পারলেই, রেহাই পাওয়ার সুযোগ থাকছে অন্য আসামিদের Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হত্যা পরিকল্পনা মিন্নির- প্রমাণ করতে পারলেই, রেহাই পাওয়ার সুযোগ থাকছে অন্য আসামিদের

হত্যা পরিকল্পনা মিন্নির- প্রমাণ করতে পারলেই, রেহাই পাওয়ার সুযোগ থাকছে অন্য আসামিদের




অনলাইন ডেস্ক: বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী হলেও আসামি দাবি করে গ্রেপ্তার হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ‘হত্যা পরিকল্পনায়’—এটা প্রমাণ করতে পারলেই অন্য আসামিদের রেহাই পাওয়ার সুযোগ থাকছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে তৎপর হয়ে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ

। তাঁর মদদে গড়ে ওঠা ‘মাদকচক্র’ ও ‘০০৭ বন্ড’ গ্রুপের অপকর্ম ঢাকতে তারা এখন মরিয়া। পাশপাশি এমন প্রত্যাশায় গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক কয়েকজন আসামির স্বজন, রাজনৈতিক অভিভাবক, ক্যাডার গ্রুপের সদস্যরাসহ প্রভাবশালীরা একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে।

এই সূত্র ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই আলোচিত মামলায় শুধু সুনামের সিন্ডিকেটের ক্যাডার নয়, অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্মীয় ও কর্মীরাও রয়েছে। বন্দুকযদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড সুনাম দেবনাথের তৈরি ছিল। যদিও পরে নয়ন সুনামের মাদক গ্রুপের প্রধান মঞ্জুরুল আলম জনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে আলাদা মাদক সিন্ডিকেট তৈরি করে। বন্ড ০০৭ গ্রুপে সক্রিয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজন সুনামের সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে অন্য নেতাদের কর্মী বনে যায়।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে দলের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে ছয়টি গ্রুপ তৈরি হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে এই দলীয় বিরোধ আরো প্রকট এবং প্রকাশ্যে হয়। রিফাত খুনের পরপরই এমপি শম্ভুরবিরোধী গ্রুপ সুনামের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়।

তারা প্রথমে খুনের নেপথ্যে সুনাম আছে বলে প্রচার চালায়। পরে দেখা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী এই হত্যার প্রধান আসামি। আসামি হয়েছে প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির ও সদস্য মশিউর রহমান শিহাবের কয়েকজন কর্মী। এদের দুজন আবার জাহাঙ্গীরের ছেলে অনিকের ঘনিষ্ঠ।

আরেকটি গ্রুপের নেতা জেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মিন্নি-রিফাতের বিয়েতে ছিলেন তিনিও। পরে রিফাতের বাবার অবস্থান পরিবর্তন হলে বিচার দাবি করে মানববন্ধনেও তাঁর সমর্থন আছে। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জাহাঙ্গীর কবিরেরও ঘনিষ্ঠ। দুই নেতার অফিসেই তাঁকে দেখা গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু আছেন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছে, শম্ভুর মনোয়নের বিরোধিতাসহ সব ক্ষেত্রে বাকি পাঁচটি গ্রুপ এক হয়ে কাজ করছিল। তবে নিজেদের কর্মী ও আত্মীয়-স্বজন অভিযুক্ত হওয়ায় তারা মাঠে নামে অন্য ভূমিকায়। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফের ছেলে বউ মিন্নির বিচার দাবি এবং মামলায় মিন্নি গ্রেপ্তারে তারা প্রতিবাদ তো করেইনি, উল্টো পক্ষেই কথা বলছে।

এদিকে রিফাত শরীফ খুনের পেছনে গ্যাং গ্রুপ ও মাদকের বিষয়টি উঠে এলে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ার কারণে পুলিশ শুরু থেকে মাদকের বিষয়টি চেপে যাচ্ছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মিন্নিকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ে ব্যাপক তৎপরতা থাকলেও অপর আসামিদের সামান্য কিছু আলামত ও জবানবন্দির মাধ্যমে অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়াতেও সীমাবদ্ধ থাকছে তারা। জবানবন্দিতে আসামিরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তদন্তের এই দুর্বলতায় বেশির ভাগ আসামিই জামিন পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মিন্নির বাবা।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কী বিরোধ আছে তা আমি জানি না। তবে আমি সব আসামিরই বিচার চাই।’

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা জানান, গত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মনোনয়নের বিরোধিতা করেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে ৫৩ জন ফরম কেনেন। জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে সবাই শম্ভুর বিরুদ্ধে একাট্টা হন। জাহাঙ্গীরের আত্মীয়-স্বজন মিলে বিশাল কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর মোকাবেলা করতে শম্ভুর ছেলে সুনাম ও ভায়রা (বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) সিদ্দিকুর রহমান, পৌর প্যানেল মেয়র রাইসুল আলম রিপন, রিপনের ছেলে মঞ্জুরুল আলম জন ও সুনামের শ্যালক শাওন তালুকদারের নেতৃত্বে আলাদা কর্মী বাহিনী তৈরি করে। ওই সময়ই উত্থান হয় নয়নের বন্ড ০০৭ ফেসবুক গ্রুপের। মাদক কারবারিরা পায় প্রশ্রয়।

পরবর্তী সময়ে নয়ন বড় মাদক কারবারি হয়ে উঠলে সুনাম সিন্ডিকেটের বাইরে চলাচল করতে শুরু করে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ালিউল্লাহ অলির বিরোধিতা করে সুনামের এই দল। নির্বাচনে জয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুল ইসলাম। একইভাবে পৌরসভা নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মহারাজ দলের মনোনয়ন পেলেও তাঁকে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয় শম্ভুর ঘনিষ্ঠ শাহাদাত হোসেনের (পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি) কাছে। এ অবস্থায় শম্ভুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় নেতা শম্ভুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে শুরু করেন।

স্থানীয়, পুলিশ, দলীয় ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতা দেলোয়ার হোসেন ২০০৮ সালে শম্ভু বিরোধীদের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি টানা আট বছর দল থেকে বহিষ্কার থাকেন। পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হননি তিনি। সহসভাপতি হলেও ক্লিন ইমেজের দেলোয়ার দলে শম্ভুর কারণে কোণঠাসা। দেলোয়ারের এক প্রতিবন্ধী ছেলে ছিল, যে কয়েক বছর আগে মারা গেছে। এ কারণে বোনের ছেলেদের (রিসান ও রিফাত) মায়ের মতোই আদর করতেন তাঁর স্ত্রী সামশুন্নাহার খুকি। তাঁর প্রশ্রয়ে রিশান ও রিফাত অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে মিশেও কাজ করত নয়ন। রিফাত শরীফ খুনের কয়েক দিন আগে খুকিকে মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে গালি দেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রিশান ও রিফাত ফরাজি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আদরের দুই ভাগিনাকে বাঁচাতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন খুকি ও তাঁর ভগ্নিপতি দুলাল ফরাজী (রিশান-রিফাতের বাবা)।

সরেজমিন অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, বন্ড ০০৭ ছাড়াও বরগুনায় ‘টিম ৬১’, ‘লারেলাপ্পা’, ‘হানীবন্ড’ নামে কিশোর গ্যাংয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ আছে। ০০৭ বন্ডের বিরোধী অবস্থান নিয়ে সুনামের খালাতো ভাই (সিদ্দিকের ছেলে) ইরফান আহমেদ বিশাল ওই গ্রুপে সক্রিয়।

ছাত্রলীগের দুই কর্মী জানায়, রিফাত খুনে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন জাহাঙ্গীরের ছেলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জোবায়ের আদনান অনিকের ঘনিষ্ঠ। সে সম্প্রতি জাহাঙ্গীর গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছিল। অপর দুই আসামি আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন ও কামরুল হাসান সাইমন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা শিহাবের কর্মী হিসেবে কাজ করছিল। আরেক আসামি আরিয়ান শ্রাবণ বরগুনার এক সাংবাদিকের ভাতিজা। তার বাবা স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকও। সাইমনের বাবা ডিশ ব্যবসায়ী কাওসার হোসেন লিটন ছেলেকে মামলা থেকে রক্ষা করতে আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলে ঘুরছেন। তাঁকে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামের চেম্বারসহ কয়েকটি স্থানে দেখেছেন এই প্রতিবেদক।

বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘‘এমপিপুত্র সুনামের সঙ্গে আমার ছেলের একসময় ‘ভালো’ সম্পর্ক ছিল। তবে গত উপজেলা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটু ফাটল ধরে।”

সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে এমপি সাহেবের ছেলের তৈরি করা মাদকে জড়িত খারাপ পোলাপানগুলো অন্য খারাপ পোলাপাইনগুলারে এক করছে। যত রাজনৈতিক বিরোধ থাকুক না কেন, আমাদের কোনো প্রভাব নেই। আমি সবারই বিচার চাই। আমি আত্মীয়-স্বজনের তোয়াক্কা করি না।’

অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ‘আমি দলীয় অবস্থান এবং আইনজীবী হিসেবে রিফাত খুনের সব আসামিরই বিচার চাই। এখানে রাজনৈতিক বিরোধ আছে ঠিকই, তবে আমি দুলাল শরীফ বা কাউকে কোনো বিষয়ে প্রভাবিত করিনি।’

তরুণ নেতা মশিউর রহমান শিহাব বলেন, ‘এই হত্যায় যারা জড়িত তাদের কাউকেই আমি চিনি না। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতি করি। বরগুনায় মাস্তান পালার রাজনীতি একজনই করেন। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় হামলা পর্যন্ত হয়েছে।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD